যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষ দূত জালমে খলিলজাদ আফগানিস্তানে তালেবানের আক্রমণ বন্ধে আলোচনার জন্য এই সপ্তাহেই কাতারের রাজধানী দোহায় যাচ্ছেন। সোমবার মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের এক বিবৃতিতে এই কথা জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, আফগানিস্তানের পরিস্থিতিতে আলোচনার জন্য মার্কিন দূতের তিনদিনের এই সফরে বিভিন্ন পক্ষের সাথে বৈঠকে অংশ নেবেন তিনি।
প্রতিরক্ষা দফতরের বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে আফগান সরকার ছাড়াও এই অঞ্চলের অন্য সংগঠনের প্রতিনিধিরাও থাকবেন যারা সহিংসতা প্রশমণ ও যুদ্ধবিরতিতে ভূমিকা রাখতে পারেন এবং গায়ের জোরে চাপিয়ে দেয়া সরকারকে স্বীকৃতি না দিতে যারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
এদিকে আফগানিস্তানের পরিস্থিতিতে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি এখন আফগানদের ওপরই নির্ভর করবে।
তিনি বলেন, ‘এটি তাদের দেশ যা তাদেরকেই রক্ষা করতে হবে। এটি তাদের সংগ্রাম।’
তবে সুযোগমত বিমান হামলার মাধ্যমে সহায়তা দেয়ার কথা জানান কিরবি।
এদিকে সোমবার উত্তরাঞ্চলীয় সামানগান প্রদেশের রাজধানী আইবাক দখলের মাধ্যমে দেশটির ষষ্ঠ প্রাদেশিক রাজধানী দখলে নিয়েছে তালেবান।
এর আগে শুক্রবার দক্ষিণের নিমরোজ প্রদেশের যারানজ ও শনিবার উত্তরের জাওযজান প্রদেশের রাজধানী শেবারগান দখল করে তারা। পরে রোববার একদিনে তালেবান যোদ্ধারা উত্তরাঞ্চলীয় তিন প্রদেশ কুন্দুজের রাজধানী কুন্দুজ, সার-ই-পুলের রাজধানী সার-ই-পুল ও তাখার প্রদেশের প্রাদেশিক রাজধানী তালোকান দখল করে নেয়।
দীর্ঘ দুই দশক আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারের দোহায় এক শান্তিচুক্তির মাধ্যমে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার করতে সম্মত হয় যুক্তরাষ্ট্র। এর বিপরীতে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অংশ নিতে তালেবান সম্মত হয়।
এই বছরের মে মাসে সৈন্য প্রত্যাহারের কথা থাকলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এপ্রিলে এক ঘোষণায় ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সৈন্য প্রত্যাহারের কথা জানান। পরে জুলাই সময়সীমা আরো কমিয়ে এনে ৩১ আগস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন তিনি।
মার্কিনিদের সাথে চুক্তি অনুসারে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারের সাথে তালেবানের সমঝোতায় আসার কথা থাকলে এখনো কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি দুই পক্ষ। সমঝোতায় না পৌঁছানোর জেরে তালেবান আফগানিস্তানের বিভিন্ন এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করে। সমঝোতা না হওয়ার জন্য আফগান সরকারকে অভিযুক্ত করছে তালেবান।
এরমধ্যে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত সংযোগসহ গ্রাম ও পার্বত্য অঞ্চলের বেশিরভাগই তালেবান দখল করে নিয়েছে। সশস্ত্র সংগঠনটি আফগানিস্তানের ৮৫ ভাগ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণের দাবি করলেও আফগান সরকারের ভাষ্য অনুসারে, দেশটির অর্ধেক অঞ্চলই বর্তমানে তালেবানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সূত্র : আলজাজিরা