ঢাকাই চলচ্চিত্রের আ’লোচিত নায়িকা পরীমনিকে সিটি ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মক’র্তা মাসরুর আরেফিন ‘মাসেরাতি’ ব্র্যান্ডের সাড়ে ৩ কোটি টাকা দামের গাড়ি উপহার দিয়েছেন বলে সম্প্রতি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এবার এ নিয়ে মু’খ খুলেছেন মাসরুর। পৃথিবীতে পরীমনি নামের কাউকে তিনি দেখেননি এবং এই নামটিও শুনেননি বলে জানান তিনি। একপর্যায়ে ওই প্রতিবেদনকে মি’থ্যাচা’র বলে দা’বি করেন তিনি। রোববার (৮ আগস্ট) দিনগত রাত ১২টা ২০ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্ট একটি পোস্ট দেন। পাঠকদের জন্য তার পোস্টটি হুবহু তুলে ধ’রা হলো-
নায়িকা পরীমনি ও আমি:
আ’মেরিকায় বিএসইসি আয়োজিত বিনিয়োগ রোড শো-তে অংশ নিয়ে আমি এখন ঢাকার পথে। এর মধ্যেই শি’কার হলাম আমা’র জীবনের প্রব’লতম মি’থ্যাচা’রের। ইত্তেফাক লিখে দিল: ‘একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিনের সঙ্গে পরীমণির অডিও রেক’র্ডে একটি গাড়ি উপহার দেওয়ার কথা রয়েছে। একই সঙ্গে ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান শওকত রুবেলের সঙ্গে পরীমণির গভীর সখ্যের বিষয়টি কথো’পকথনে উঠে এসেছে।’ আমা’র বলার কোনো ভাষা নেই, কোনোকিছু বলারই কোনো ভাষা নেই।
আমি আমা’র বাপের জীবনে, এই ম’র্ত্যের পৃথিবীতে, এই ধ’রাধামে পরীমণি নামের কাউকে দেখিনি। অ’তএব তার নম্বর আমা’র কাছে থাকার প্রশ্নই আসে না। এমনকি ‘বোট ক্লা’ব‘ ঘটনার আগে পর্যন্ত পরীমণি নামটাও শুনিনি। আমা’র মানুষকে জিজ্ঞাসা করতে হয়েছিল যে, কে এই পরীমনি? আমা’র কাজ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যাংকিং আর তারপর সাহি’ত্য নিয়ে পড়ে থাকা। প্রতিদিন। একই। ঢাকার একটা মানুষও (হাই সোসাইটির একজনও) বলতে পারবেন না তারা কেউ আমাকে কোনোদিন কোনো ক্লাব বা পা’র্টিতে দেখেছেন (এখানে আমি ক্লাব বা পার্টিতে যাওয়ার নি’ন্দা করছি না, সেটা যারা যাবার তারা যেতেই পারেন; আমি শুধু বোঝাচ্ছি যে মানুষ হিসাবে আমা’র টাই’পটা কী’?)। এতটাই ঘর ও অফিস / অফিস ও ঘরমুখী এক মানুষ আমি।
অ’তএব বলছি, তাকে গাড়ি দেওয়ার কথাটা আমা’র কানে লাগছে মঙ্গলগ্রহের ভাষায় বলা কোনো কথার মতো। আমা’র নিজের একটাও গাড়ি নেই, একটা সামান্য মা’রুতি বা ধরেন একটা টয়োটা করোলা গাড়িও না। ব্যাংক আমাকে চলার জন্য গাড়ি বরাদ্দ দিয়েছে, তাতেই চ’ড়ি। ব্যাংকের চাকরির শেষে নিশ্চয় কোনো ব্যাংক থেকে কার লোন নিয়ে একটা গাড়ি কিনে তাতে চ’ড়ব। কোনো অ’ভিযো’গের মধ্যে মিনিমাম মিনিমাম মিনিমাম এক সুতো সত্য থাকতে হয়। কিন্তু এ এক ভ’য়ঙ্ক’র বিষয় যে, আমি যাকে চিনি না, জীবনে যার বা যাদের সঙ্গে হ্যালো বলা দূরে থাক, যাদের নামটা পর্যন্ত আমি প্রথম জানলাম এই কদিন আগে (পিয়াসা নামটা মাত্র দুদিন আগে), সেই নায়িকা বা মডেলকে আমি গাড়ি দিয়ে ফেললাম?
কোথায় যোগাযোগ হল আমাদের? ফোন কল? তার নাম্বার কী’? কল রেক’র্ড আনা হোক। তাহলে ঘটনা কী’? আমি সত্যি জানি না, ঘটনা কী’। বুঝি যে, আমাকে নিয়ে (অর্থাৎ এক অর্থে সিটি ব্যাংক নিয়ে) একটা সস্তা ষ’ড়য’ন্ত্র চলছে। ইত্তেফাক-এর খবরে ওরা দ্যাখেন সিটি ব্যাংক চেয়ারম্যানের নামটা পর্যন্ত লিখতে পারেনি, লিখেছে “ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান শওকত রুবেলের সঙ্গে পরীমণির গভীর সখ্যের বিষয়টি…।” শওকত রুবেল নামের মানুষটা কে? এই নামে তো কেউ নেই। সাংবাদিক ভাইয়েরা, কী’ লিখেছেন আপনারা এসব? মানুষ ও তার ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন আপনাদের কাছে এতই ফেলনা যে, নামটাও ঠিক জেনে লিখবেন না? প্রিয় ইত্তেফাক, আমা’র ব্যাংকের চেয়ারম্যানের নাম আলাদা। সেটা শওকত রুবেল না।
আমা’র অনুমান এই যে, ব্যবসায়ী শওকত আজিজ রাসেল আমাদের ব্যাংক চেয়ারম্যানের ছোট ভাই। একটা গোষ্ঠী তার হয়তো ক্ষ’তি চায় এবং তারা তাদের সেই চাওয়ার সঙ্গে তাকে সিটি ব্যাংক চেয়ারম্যান ভেবে নিয়ে ব্যাংক প্রধান হিসেবে আমাকেও নি’ষ্ঠুর ও বাছবিচারহী’ন এক সামাজিক নর্দ’মা’র মধ্যে ঠেলে দিতে এক মুহূর্ত দ্বি’ধা করলেন না। তারা বুঝলেন না যে, ‘আগস্ট আবছায়া‘ (বঙ্গবন্ধু হ’ত্যাকা’ণ্ডে’র ওপরে চার বছরের গবেষণার শেষে বাংলায় লেখা অন্যতম সেরা উপন্যাসটা আমা’র লেখা), ‘আলথুসার‘ বা ‘আন্ডারগ্রাউন্ড‘ নামের উপন্যাসের লেখক মাসরুর আরেফিনের, বা বাংলায় ‘ফ্রানৎস কাফকা গল্পসমগ্র‘ কিম্বা ‘হোমা’রের ইলিয়াড‘-এর এই অনুবাদকের সিম্পলি সিম্পলি সিম্পলি এক পয়সা দুর্নী’তির টাকাও থাকতে পারে না যা দিয়ে (ব্যাংক লোন না নিয়ে) তিনি নিজের জন্য একটা সাধারণ বা বিলাসী গাড়ি কিনতে পারেন। অন্যের জন্য কেনার কথা বাদই দিন।
এবার লেখক সত্তার জায়গা থেকে একটা কথা বলি। আইনি বিষয় ও সামাজিক বোঝাপড়ার বিষয়গুলো বেশ তো গু’লিয়ে যাচ্ছে! আমা’র কাউকে কোনো গাড়ি দেবার সাম’র্থ্য নেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে আমা’র কাউকে ধরুন ভালো লাগল (যার সম্ভাবনা বাস্তবে কম, কারণ আমা’র দুই মে’য়ে ও স্ত্রী’ নিয়ে এক সুন্দর সংসার আছে), তখন তাকে যদি আমি আমা’র সাম’র্থের মধ্যে দুই বক্স চকলেটও কিনে দিই, সেটা নিয়ে আই’ন ছাপিয়ে, সংবিধানের মৌলিক অধিকার ছাপিয়ে ‘সমাজের বি’চার’ নামের যে-এক ড্রা’গন আছে, সে এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে হাউ হা’উ করে উঠবে। ব্যক্তি স্বাধীনতার সঙ্গে নৈতিকতার প্রশ্নকে টেনে টেনে এনে আইনের আরও ঊর্ধ্বেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দৈনন্দিনের বাছ-বি’চারগুলোকে।