টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছেড়ে কোহলি আসলে ক্ষমতার ভার কিছুটা হারিয়ে ফেলেছিলেন। অধিনায়কত্বে তাঁর ভাগ্যের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিয়েছিলেন বিসিসিআইয়ের হাতে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, একদিক থেকে দেখলে বিসিসিআইয়ের প্রতি কোহলির বার্তাটা তখন এমন ছিল যে—
চাইলে আমাকে ওয়ানডের অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দিতে পারেন। গত বুধবার তা-ই করেছে বিসিসিআই। পেছনে ফিরে দেখলে, ভারতীয় ক্রিকেটে অধিনায়কত্বে থাকা না থাকার সিদ্ধান্ত কখনোই খেলোয়াড়দের তেমন প্রভাব ছিল না। ১৯৮৩ বিশ্বকাপ জেতার এক বছরের মধ্যেই কপিল দেব অধিনায়কত্ব হারিয়েছিলেন। সুনীল গাভাস্কার অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ১৯৮৫ বিশ্ব ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর।
সৌরভ গাঙ্গুলীর অধিনায়কত্বও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল ভারতের ক্রিকেটের এক জটিল সময়ে। এমনকি তিনটি আইসিসি ইভেন্ট জেতা মহেন্দ্র সিং ধোনিকেও অধিনায়কত্ব ছাড়ার আগে নির্বাচক কমিটি বার্তা দিয়ে রেখেছিল। তখন নির্বাচক কমিটির মনে হয়েছিল, সাদা বলের নেতৃত্বে ধোনির বদলে অন্য কাউকে দরকার। ধোনির হাত থেকে ব্যাটনটা তখন যায় কোহলির হাতে। এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বদল হচ্ছে, টেস্টেও রাহানেকে সরিয়ে রোহিতকে সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে।
ভারতীয় দলে রোহিতের ক্রমবর্ধমান দাপট দেখে মনে হতেই পারে, অধিনায়ক হিসেবে কোহলির দিন শেষের গান শুনছে। সাদা বলে ভারতের ইতিহাস-সেরা অধিনায়কদের একজনই ছিলেন কোহলি। ৯৫ ওয়ানডেতে ৬৫ জয় তাঁর, জয়ের হার ৭০-এর ওপরে। ৪৫ টি-টোয়েন্টিতে তাঁর অধীনে ভারত জিতেছে ২৭ ম্যাচে। অন্যদিকে কোহলির ‘ডেপুটি’ থাকার সময়েই রোহিত ভারতকে ১০ ওয়ানডে ও ১৯ টি-টোয়েন্টিতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে সাদা বলের ক্রিকেটে ভারতের পূর্ণকালীন অধিনায়ক হিসেবে তাঁর শুরু হয়েছে। সেখানে নিউজিল্যান্ডকে ধবলধোলাই-ই করেছে ভারত। এর পাশাপাশি অধিনায়ক হিসেবে রোহিতের দক্ষতার প্রমাণ দেয় আইপিএলে তাঁর জেতা পাঁচ শিরোপাও। ২০১৭ সালে ধোনির কাছ থেকে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভারতের অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর কোহলি প্রায় সব দেশেই ভারতকে সিরিজ জিতিয়েছেন।
কিন্তু আইসিসির টুর্নামেন্ট জিততে পারেননি। সবচেয়ে কাছে গিয়েছিল ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে, সেখানে ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের কাছে হেরে যায় ভারত। কিন্তু এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এসেছে কোহলির অধিনায়কত্বে সবচেয়ে বড় ধাক্কা হয়ে। পাকিস্তানের পর নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে শুরু বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বই পেরোতে পারেনি ভারত। বিশ্বকাপের পর বিসিসিআই অবশ্য প্রকাশ্যে বিশ্বকাপ-ব্যর্থতাকে সেভাবে গুরুতর কিছু হিসেবে দেখায়নি। ‘
একটা খারাপ টুর্নামেন্ট কেটেছে’ বলে বিশ্বকাপে ব্যর্থতাকে আড়াল করতে চেয়েছিল। কিন্তু ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানাচ্ছে, এর পর থেকেই বোর্ড সাদা বলের ক্রিকেটে ভারতকে পুরোপুরি নতুন অধিনায়কের অধীনে নেওয়ার ব্যাপারে কাজ শুরু করে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আর ১২ মাসও বাকি নেই। এর এক বছর পর ভারতের মাটিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। রোহিতকে এর মধ্যে দল গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ ও সময় দিতে চায় বিসিসিআই।
কোহলির বাজে ফর্মও ভারতীয় দলে তাঁর দাপট কমে যাওয়ার একটা কারণ। গত দুই বছরে ১২ ওয়ানডেতে কোহলির রান ৫৬০, কোনো সেঞ্চুরি নেই। গড় ৪৬.৬৬, যেখানে তাঁর ক্যারিয়ার গড় ৫৯.০৭। এই সময়ে ২০ টি-টোয়েন্টিতে কোহলি ৪৯.৫০ গড়ে করেছেন ৫৯৪ রান। আর টেস্টে? ১৩ ম্যাচে রান ৫৯৯। গড় মাত্র ২৬.০৪! ঝামেলাটা হলো, ভারতীয় ক্রিকেট সেভাবে কখনোই আলাদা সংস্করণে আলাদা অধিনায়ক নিয়ে খেলেনি।
কদিন আগেই ভারতের কোচের দায়িত্ব পাওয়া রাহুল দ্রাবিড় নতুন এই ধারণায় কীভাবে দলকে টেনে নেন, রোহিত আর কোহলির মধ্যে সম্ভাব্য ‘ক্ষমতার দ্বন্দ্ব’ কীভাবে সামলে নেন, সেটিই দেখার। টেস্টে কোহলির অধীনেই ভারত অনন্য উচ্চতায় উঠেছে, কোহলি টেস্টে ভারতের সফলতম অধিনায়কই! কিন্তু ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, সেখানেও রোহিতের ছায়া দিনে দিনে বড়ই হচ্ছে!