ঘাড়ে প্রবল যন্ত্রণা নিয়ে কানপুর টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর অপরাজিত ৬১ সবাই দেখেছেন। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওয়াংখেড়ের বাইশ গজে করেছেন ২৭ রান। সঙ্গে রয়েছে দুরন্ত উইকেটকিপিং। কিন্তু একজন প্রকৃত পারফর্মারের লড়াই এখানেই শেষ হয় না। মাঠে তাঁর লড়াইয়ের সাক্ষী ক্রিকেট বিশ্ব থাকলেও, অনেকেই জানেন না যে, গত তিন সপ্তাহে তাঁর পরিবারের উপর দিয়ে কার্যত ঝড় বয়ে গিয়েছিল। স্ত্রী দেবারতি ডেঙ্গিতে প্রবল ভাবে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। দু’টি ছোট্ট ছেলে-মেয়েকে তখন সামলেছেন ওঁর বাবা-মা। ক্রিকেট জীবনকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য এক শ্রেণির লোকজন তো অনেক আগেই উঠেপড়ে লেগেছিলেন। এ বার ওঁরা নখ-দাঁত বের করে প্রহর গুনছেন। ঋষভ পন্থ (Rishabh Pant) নামটা সব সময় ওঁর চোখের সামনে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেন জানান দেওয়া যে ‘এটাই কিন্তু শেষ সুযোগ!’ তবে প্রায় এক বছর পর টেস্ট খেললেও ঋদ্ধিমান সাহা-র (Wriddhiman Saha) মধ্যে কোনও জড়তা ছিল না।
‘সুপার ম্যান’ উপাধি তো তিনি আগেই পেয়েছিলেন। গ্রিনপার্কে ব্যাট হাতে নিন্দুকদের চুপ করিয়ে দেওয়ার পর ভারতীয় দলের (Team India) সতীর্থরা তাঁকে ‘ডানহাতি চন্দ্রপল’ বলে ডাকা শুরু করেছেন। ব্যাপারটা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছেন পাপালি। নিউজিল্যান্ডের (New Zealand) বিরুদ্ধে সিরিজ জেতার পর সোমবার রাতে ঘরে ফিরেছেন। স্ত্রী এখন অনেকটা সুস্থ। কাছে পেয়েছেন দুই সন্তানকে। গত দুই বছর ধরে খারাপ সময় কাটানোর পর সাউথ সিটির ৩৫ তলার ফ্ল্যাটে আবার সুখ ফিরে এসেছে। তবে টেস্ট ক্রিকেটে ‘পুনর্জন্ম’ নেওয়া ঋদ্ধি কিছু বাঙালির কটাক্ষ ভুলতে পারছেন না। গত দুই টেস্টের একাধিক স্মৃতি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে জি ২৪ ঘণ্টাকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন ঋদ্ধি।
প্রশ্ন: অনেকের মতে আপনার টেস্ট ক্রিকেটে ‘পুনর্জন্ম’ হল। আপনার মন্তব্য?
ঋদ্ধি: আমি এমন ভাবনাচিন্তা নিয়ে কোনওদিন ক্রিকেট খেলিনি। ভবিষ্যতেও খেলব না। তবে কিছু মানুষ ভেবে নিয়েছিল এটা আমার শেষ সিরিজ। তাদের জন্য হয়তো আমার পুনর্জন্ম হয়েছে! দলের জন্য কিছু অবদান রাখতে পারলে মনের ভেতর একটা আলাদা অনুভূতি তৈরি হয়। কিন্তু সবাই তো সবসময় সেটা পারে না। অজিঙ্কা রাহানে ও চেতেশ্বর পূজারা এত বড় মাপের ব্যাটার। ওরাও তো নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারছে না। কিন্তু তাই বলে কি ওরা খারাপ ব্যাটার? মোদ্দা কথা হল প্রথম একাদশে থাকা সবাই নিজের সেরা পারফরম্যান্স করার চেষ্টা করে। কেউ পারে। কেউ সাফল্য পায় না।
প্রশ্ন: নিন্দুকদের কটাক্ষ কানে এলে রাগ হয়? ট্রোলিংয়ে বিরক্ত হন?
ঋদ্ধি: কলকাতার কিছু সংবাদ মাধ্যম আছে যারা আমার অবসরের দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলেছিল। তবে রাগ হয়নি। বরং হাসি পায়। ছোটবেলা থেকে ক্রিকেট খেলার জন্য আমি নিজের শরীর ও নিজের খেলাকে সবচেয়ে ভাল বুঝি। তাই আমার অবসর নিয়ে মন্তব্য করার অধিকার কারও নেই। সেই সিদ্ধান্ত একান্ত ভাবে আমিই নেব। সঠিক সময় সেই সিদ্ধান্ত নেব। এতটা বলতে পারি এখনও অবসরের সময় আসেনি।
প্রশ্ন: প্রায় এক বছর পরে টেস্ট খেললেও, কিপিং করার ক্ষেত্রে একই রকম ক্ষিপ্ৰতা। এই ফিটনেসের রহস্য?
ঋদ্ধি: এক বছর পর খেলি কিংবা দুই বছর পর খেলি সেটা বড় কথা নয়। ভারতীয় দলের সঙ্গে থাকলে সব সময় ফিজিক্যাল ট্রেনারের সঙ্গে থাকি। ফিজিক্যাল ট্রেনার যে যে ড্রিলগুলো দেয় সেগুলো করে যাই। তাছাড়া আরও একটা কথা মনে রাখা দরকার। কিপিং ও ব্যাটিং কিন্তু দুনিয়ায় কারও নিখুঁত নয়। আর সেটা নয় বলেই সবাই ম্যাচে নামার আগে নিজেদের ঝালিয়ে নেয়। আমিও সেই নীতি ছোটবেলা থেকে মেনে চলছি। তাছাড়া সবার কাছে ফিজিক্যাল ট্রেনারের তরফ থেকে ফিটনেস চার্ট দেওয়া হয়ে থাকে। বাড়িতে থাকলে সেই চার্ট মেনে ফিটনেস ধরে রাখার চেষ্টা করি।